কথা ও সুর : হীরেন বসু/তাল : দাদরা

আজ আগমনীর আবাহনে কী সুর উঠেছে বেজে ।
দোয়েল শ্যামা ডাক দিল তাই বরণের এয়ো সেজে ॥
ভরা ভাদরের ভরা নদী কুলুকুলু ছোটে নিরবধি ।
সে সুর গীতালি দেয় করতালি, নাচে তরঙ্গ দোলনে যে ॥
পূরব দীপক আরতির দীপ শত ছটা মেঘ জালে,
দিক্‌বালা তায় আলতা গুলেছে রক্ত আকাশ থালে ।
ঘাসের বুকেতে শিশির নীর ধোয়াবে ও-রাঙ্গা চরণ ধীর,
সবুজ আঁচলে মুছে নেবে বলে ধরণী শ্যামলা সেজেছে যে ॥

আধুনিক গান ।। কথা ও সুরঃ সলিল চৌধুরী

স্থায়ী

আজ তবে এইটুকু থাক বাকি কথা পরে হবে।
ধূসর ধূলির পথ ভেঙে পড়ে আছে রথ,
বহুদূর দূর যেতে হবে।।

অন্তরা

সবুজ সবুজে মেশা নীল নীলিমায় পাবে না আমায়
গোধূলির ছায়াপথে খুঁজো না আমায়।
শরতের কোন এক নাম না জানা গাঁয়
শিউলীর ফুল যেথা ঝ’রে ঝ’রে যায়
কিশোরী মনের মতো দু’টি চোখে অবনত
না গাওয়া সে গান হয়ে রবে।।

আভোগ

তখন অন্য মন অন্য আশা, অন্য ভাষা,
জানি না কী রূপ নেবে ভালোবাসা,
তুমি যদি মনে মনে মগ্ন হয়ে
ফুলের শিশু হয়ে রও ঘুমিয়ে
আমি সূর্য্যের হয়ে তোমাকেই যাব ছুঁয়ে
সেকথা কি ভুল হয়ে যাবে।।

দ্বিজেন্দ্রগীতি/কাহারবা

আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে প্রকৃতি সতীরে সাজিয়ে দাও।
আজি সাগরে ভুবনে আকাশে পবনে নূতন কিরণ ছড়িয়ে দাও।।
আজি পুরানো যা কিছু দাও গো ঘুচিয়ে,
মলিন যা কিছু ফেলো গো মুছিয়ে।
শ্যামলে কোমলে কণকে হীরকে ভুবন ভূষিত করিয়ে দাও।।
আজি বীণায় মুরজে স্বননে গরজে জাগিয়া উঠুক গীতি গো
আজি হৃদয় মাঝারে জগত বাহিরে ভরিয়া উঠুক প্রীতি গো।
আজি নূতন আলোকে নূতন পুলকে
দাও গো ভাসায়ে ভূলোকে দ্যুলোকে,
নূতন হাসিতে বাসনারাশিতে জীবন মরণ ভরিয়ে দাও।।

কথাঃ ধীরেন্দ্রনাথ দাস/সুরঃ হীরেন বসু/তালঃ দাদরা

আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও জননী এসেছে দ্বারে ।
সপ্তসিন্ধু কল্লোল রোল বেজেছে সপ্ত তারে ॥
সুর সপ্তক তুলেছে তান সপ্ত ঋষির গানে,
সপ্ত স্বর্গে দুন্দুভি ঘোষে সপ্ত গ্রহের টানে;
অন্তরে আজ সপ্ত সুরের নব জাগরণ সুরে ॥
সাতরাঙ্গা রবি রামধনু হাতে মরণের বাণ হানে,
সপ্তকোটি সুসন্তান বিজয়মাল্য আনে;
সপ্ততীর্থ একসাথ হয় হৃদি মন্দির দ্বারে,
তুলে নাও বুকে তারে জননী এসেছে দ্বারে

আমার আনন্দিনী উমা আজও আসেনি তার মায়ের কাছে
হে গিরিরাজ, দেখে এসো কৈলাশে মা কেমন আছে।।
মোর মা যে প্রতি আশ্বিন মাসে, মা ব’লে ছুটে আসে
‘মা আসেনি’ ব’লে আজও ফুল ফোটেনি লতায় গাছে।।
তত্ব-তলাশ নিইনি মায়ের তাই বুঝি মা অভিমানে
না এসে তার মায়ের কাছে ফিরছে শ্মশানে মশানে।
ক্ষীর-নবনী ল’য়ে থালায় কেঁদে ডাকি ‘আয় উমা আয়’
যে কন্যারে চায় ত্রিভুবন তাকে ছেড়ে মা কি বাঁচে।।

নজরুলগীতি/দাদরা

আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।।
আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি আমারি তিয়াষী বাসনায়।।
আমারি মনের তৃষিত আকাশে কাঁদে সে চাতক আকুল পিয়াসে,
কভু সে চকোর সুধা-চোর আসে নিশীথে স্বপনে জোছনায়।।
আমারি মনের পিয়াল তমালে হেরি তারে স্নেহ-মেঘ-শ্যাম,
অশনি-আলোকে হেরি তারে থির-বিজুলী-উজল অভিরাম।
আমারি রচিত কাননে বসিয়া পরানু পিয়ারে মালিকা রচিয়া
সে মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া আপনারি গলে দোলে হায়।।

শ্যামাসংগীত/দাদরা
কথা ও সুরঃ আচার্য্য সঞ্জয় চক্রবর্তী

আমার চোখের মণি কালো বলে মাকে বলি কালী
মা’র দয়াতেই বসি চলি এরূপ কথা সদাই বলি
তবু কৃপা-ভিক্ষা নিতে আমি কিনে আনি পূজার ডালি।।
কামনা বাসনার অসুর গড়ে নিজের ভুলে
মায়ের অমন কোমল হাতে খড়গ দিলাম তুলে।
গরীব মা, তার নেই যে বসন, বসতে দেব নেই সে আসন
তাই দানবেরই মুণ্ড কেটে বসন গড়েছে করালী।।
পিতা আমার শ্মশানে রয়, এই সুযোগে সমন ভয়,
ভয় দেখালে আমি শুধু কেঁদে বলি দাও মা অভয়।
ভীরু ছেলে নিয়ে কোলে (মা, মা গো) শুধু ভয় ভাঙাবে বলে
মা সংহার নাচ শুরু করে, শিব এলো তাই শ্মশান ছেড়ে
আপন বুক পেতে মা’র নাচ থামিয়ে মাকেই বলে শ্মশান কালী।।

নজরুলগীতি/দাদরা

আমার গানের মালা
আমি করব কারে দান।
মালার ফুলে জড়িয়ে আছে
করুণ অভিমান।।

চোখে মলিন কাজল লেখা
কন্ঠে কাঁদে কুহু কেকা।
কপোলে যার অশ্রু রেখা
একা যাহার প্রাণ।।

শাখায় ছিল কাঁটার বেদন
মালায় সূচির জ্বালা।
কন্ঠে দিতে সাহস না পাই
অভিশাপের মালা।।

বিরহে যার প্রেমারতি
আঁধার লোকে অরুন্ধতী।
নাম না জানা সেই তপোতী
তার তরে এই গান।।

শ্যামাসঙ্গীত
কথাঃ অতুল কৃষ্ণ মিত্র
সুরঃ Traditional Music (প্রচলিত)
তালঃ দাদরা

মা আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল
সকলই ফুরায়ে যায় মা
জনমের শোধ ডাকি গো মা তোরে
কোলে তুলে নিতে আয় মা।।

পৃথিবীর কেউ ভালো তো বাসে না
এ পৃথিবী ভালোবাসিতে জানে না
যেথা আছে শুধু ভালোবাস-বাসি
সেথা যেতে প্রাণ চায় মা ।।

বড়ো দাগা পেয়ে বাসনা ত্যেজেছি উউ
বড়ো জ্বালা সয়ে কামনা ভুলেছি
অনেক কেঁদেছি কাঁদিতে পারিনা
বুক ফেটে ভেঙে যায় মা।।

ভক্তিগীতি/দাদরা
কথাঃ পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়
সুরঃ মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়

আমায় একটু জায়গা দাও মায়ের মন্দিরে বসি।
আমি অনাহূত একজন অনেক দোষেতে দোষী।
আমি সবার পিছনে থাকব, শুধু মনে মনে মাকে ডাকব
কারো কাজে বাধা হলে সাজা দিও যত খুশী,
আমায় সাজা দিও যত খুশী।।
ভেবো না হঠাৎ সামনে গিয়ে মায়ের চরণ ছুঁয়ে দেবো
দূর থেকে শুধু চোখের জলেতে মা’র রাঙা পা ধুয়ে দেবো।।
শুধু আরতি যখন করবে মা’র পূজাদীপ তুলে ধরবে
আমাকে দেখতে দিও মায়ের একটু হাসি।।

রজনীকান্তের গান

আমি অকৃতি অধম ব’লেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি।
যা দিয়েছ, তারি অযোগ্য ভাবিয়া কেড়েও তো কিছু নাওনি।।
তব আশীষ কুসুম ধরি নাই শিরে, পায়ে দলে গেছি, চাহি নাই ফিরে,
তবু দয়া ক’রে কেবলি দিয়েছ, প্রতিদান কিছু চাওনি।।
আমি ছুটিয়া বেড়াই, জানিনা কি আশে, সুধা পান করে মরি গো তিয়াসে,
তবু যাহা চাই সকলি পেয়েছি, তুমি তো কিছুই পাওনি।।
আমায় রাখিতে চাহো গো, বাঁধনে আঁটিয়া, শতবার যাই বাঁধন কাটিয়া।
ভাবি ছেড়ে গেছো, ফিরে চেয়ে দেখি, এক পাও ছেড়ে যাওনি।।

রজনীকান্তের গান/দাদরা

আমি সকল কাজের পাই হে সময়, তোমারে ডাকিতে পাই নে,
আমি চাহি দারা১ সুত২ সুখ সম্মিলন, তব৩ সঙ্গ সুখ চাই নে।।
আমি কতই যে করি বৃথা পর্যটন, তোমার কাছে তো যাই নে;
আমি কত কী যে খাই ভস্ম আর ছাই, তব প্রেমামৃত খাই নে।।
আমি কত গান গাহি মনের হরষে, তোমার মহিমা গাই নে;
আমি বাহিরের দুটো আঁখি মেলে চাই, জ্ঞান আঁখি মেলে চাই নে।।
আমি কার তরে দেই আপনা বিলায়ে, ও পদতলে বিকাই নে,
আমি সবারে শিখাই কত নীতি-কথা, মনেরে শুধু শিখাই নে।।
১স্ত্রী, ২পুত্র, ৩তোমার

রজনীকান্তের গান // তালঃ একতাল

আমি তো তোমারে চাহিনি জীবনে, তুমি অভাগারে চেয়েছ।
আমি না ডাকিতে হৃদয় মাঝারে নিজে এসে দেখা দিয়েছ।।
চির-আদরের বিনিময়ে সখা, চির-অবহেলা পেয়েছ।
আমি দূরে ছুটে যেতে দু’হাত পসারি, ধরে টেনে কোলে নিয়েছ।।
‘ও পথে যেও না ফিরে এসো’ ব’লে, কানে কানে কত কয়েছ।
আমি তবু চলে গেছি ফিরায়ে আনিতে, পাছে পাছে ছুটে গিয়েছ।।
এই চির-অপরাধী পাতকীর বোঝা, হাসিমুখে তুমি বয়েছ।
আমার নিজ হাতে গড়া বিপদের মাঝে, বুকে ক’রে নিয়ে রয়েছ।।

দ্বিজেন্দ্রগীতি/দাদরা

আমরা এমনি এসে ভেসে যাই
আলোর মতন হাসির মতন
কুসুম গন্ধ রাশির মতন
হাওয়া মতন নেশার মতন
ঢেঊয়ের মতন এসে যাই।।

আমরা অরুণ কনক কিরণে চড়িয়া নামি
আমরা সান্ধ্যরবির কিরণে অস্তগামী
আমরা শরত ইন্দ্রধনুর বরণে
জ্যোৎস্নার মতো অলস চরণে
চপলার মতো চকিত চমকে
চাহিয়া ক্ষণেক হেসে যাই।।

আমরা স্নিগ্ধ কান্ত শান্তি সুক্তি ভরা
আমরা আসি বটে তবু কাহারে দিই না ধরা
আমরা শ্যামলে শিশিরে গগনের নীলে
গানে সুগন্ধে কিরণে নিখিলে
স্বপ্নরাজ্য হতে এসে ভেসে
স্বপ্নরাজ্য দেশে যাই।।

আধুনিক গান
কথাঃ মুকুল দত্ত
সুরঃ কিশোর কুমার
শিল্পীঃ লতা মঙ্গেশকর

ভালোবাসার আগুন জ্বেলে কেন চলে যায়
ব্যথার বাতাস কেঁদে মরে আমার আঙিনায়।।
আজকে দেহের কুঞ্জবনে কোন্‌ ভ্রমরে গুঞ্জরণে
সর্বনাশের মাতাল কলি ফুল হতে চায়।।
আজকে রাতে ভেবেছিলাম ফুরিয়ে যাব আমি
আঁধারের ফুল বাগানে হারিয়ে যাব আমি
ভালবাসার এমন আঁধার বিফল বুঝি যায় বিফল বুঝি রয়
এমন রাতে বেদরদী কেন চলে যায়।।

কথাঃ শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
ছায়াছবিঃ চারমূর্তি
সুরঃ অজয় দাশ
তালঃ দাদরা

ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো
তোমাতে আমরা লভিয়া জনম ধন্য হয়েছি ধন্য গো।।
কিরিট ধারিণী দুষার শৃঙ্গে সবুজে সাজানো তোমার দেশ
তোমার উপমা তুমি তো মা, তোমার রূপের নাহি তো শেষ।
সঘন গহন তমসা সহসা আসে যদি নেমে আকাশে তোর,
হাতে হাত রেখে মিলি এক সাথে আমরা আনিব নতুন ভোর।।
শক্তিদায়িনী দাও মা শক্তি ঘুচাও দীনতা ভীরু আবেশ
আঁধার রজনী ভয় কী জননী, আমরা বাঁচাবো এ মহাদেশ।
রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বীর সুভাষের মহান দেশ,
নাহি তো ভাবনা করিনা চিন্তা হৃদয়ে নাহি তো ভয়ের রেশ।।

আধুনিক গান || দাদরা
কথাঃ অর্ণা শীল
সুরঃ জয় সরকার

দেখেছো কি তাকে ওই নীল নদীর ধারে?
বৃষ্টি পায়ে পায়ে তার কী যেন কী নাম
জলে ভেজা মাঠে আকাশে হাত বাড়ায়
মেঘের আড়ালে ভেসে থাকা সেই রংধনুকে চায় ।।

ঝরা-পাতা উড়ে তাকে ছুঁয়ে বলে, “ যা, যারে,
এখানে বড়োই ফিকে সব, তুই যা, যা যা ”
তাই সে যায়, ছুটে বেড়ায় ধূসর প্রান্তরে,
মেঘের গায় হাত বোলায়, রংধনুকে চায় ।।

আন্‌মনা মেঘ দূরে যায় কেন, কে জানে।
কিছুতেই তার কাছে ধরা দেয় না, না না
তবুও তার মেঘে ওড়ার অন্তহীন টানে
ভিজে হাওয়ায় পাখিরা গায়, রংধনুকে চায় ।।

জানি একদিন মেঘের ঠিকানা সে পাবে
বলবে পাখিরা, “ ওরে মেঘ, তুই গা, গা গা
তোর কাছেই আসবে গান, তোর কাছেই যাবে,
যারা হারায় রূপকথায়, রংধনুকে চায় ” ।।

শ্যামাসঙ্গীত/ত্রিতাল
কথাঃ দাশরথি রায় সুরঃ চিত্ত রায়

দোষ কারো নয় গো মা
আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা।।

আমার ধর্মাধর্ম হলো কোদণ্ড-স্বরূপ
পুণ্য-ক্ষেত্র মাঝে কাটিলাম কূপ
সে কূপে বেড়িল কাল-রূপ জল
কালো মনোরমা।।

আমার কী হবে তারিণী ত্রিগুণ ধারিণী
বিগুণ করেছে স্বগুণে,
কিসে এ বারি নিবারি
ভেবে দাশরথির অনিবার বারি নয়নে।

আমার ছিল বারি কক্ষে, ক্রমে এলো বক্ষে
জীবনে জীবন মা কেমনে হয় রক্ষে
আছি তোর অপিক্ষে, দে মা মুক্তি ভিক্ষে
কটাকক্ষেতে করে পার।।

নজরুলগীতি/বিদেশীসুর/কাহারবা

দূরদ্বীপবাসিনী চিনি তোমারে চিনি
দারুচিনির দেশের তুমি বিদেশিনী গো
সুমন্দ-ভাষিণী।
প্রশান্ত সাগরে
তুফানে ও ঝড়ে
শুনেছি তোমারি অশান্ত রাগিণী ।।
বাজাও কি বুনো সুর পাহাড়ি বাঁশীতে
বনান্ত ছেয়ে যায় বাসন্তী হাসিতে
তব কবরীমূলে নব এলাচের ফুল
দোলে কুসুম-বিলাসিনী।

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী মহিষাসুরমর্দিনী জয় মা দুর্গে
দেবী দুর্গে জগত জননী, তুমি মা মঙ্গলকারিণী।।
দশভূজা দশ শাস্ত্র শালিনী মধু কৈটব সংহারিণী
অদ্বিতীয়া তুমি অনন্যা, ভবানী মা দুঃখহারিণী।।
শুম্ভ নিশুম্ভ দানব দলনী ভক্তি মুক্তি দায়িণী
যোগ প্রসবিনী মহা যোগিনী চণ্ডিকে মা শিবাণী ।।
সত্য গুণে মহা সরস্বতী, রজো গুণে মহা লক্ষ্মীরূপিনী
তমো গুণে মহা দুর্গা তুমি, মোহমায়া গো সনাতনী।।

আধুনিক গান // কথাঃ শ্যামল গুপ্ত // সুরঃ সতীনাথ মুখোপাধ্যায়
শিল্পীঃ চিত্রা সিং

দু’টি মন আর নেই দু’জনার।
রাত বলে আমি সাথী হবো যে,
ফাগুনের রাতে আমি,
রূপকথা হয়ে কাছে রবো যে।।
ফুল বলে রঙে আর ছেয়ো না।
পাখি বলে আর গান গেও না।
আমাদের মিতালী মায়াকে,
কানে কানে কতো কথা কবো যে।।
শুকতারা বলে আমি আছি তো !
দিশাহারা হতে আর ভয় কী ?
পাছে ঘুম ঝ’রে পড়ে দু’চোখে—
হাসি মুখে তাই জেগে রবো যে।।

এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়
এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু।
কোন্‌ রক্তিম পলাশের স্বপ্ন
মোর অন্তরে ছড়ালে গো বন্ধু।

আমলকি পিয়ালের কুঞ্জে,
কিছু মৌমাছি এখনও যে গুঞ্জে,
বুঝি সেই সুরে আমারে ভরালে গো বন্ধু।

বাতাসের কথা সে তো কথা নয়
রূপকথা ঝরে তার বাঁশিতে
আমাদের মুখে কোন কথা নেই
শুধু দু’টি আঁখি ভ’রে রাখি হাসিতে।

কিছু পরে দূরে তারে জ্বলবে
হয়তো তখন তুমি বলবে।
জানি মালা কেন গলে পরালে গো বন্ধু।

ছড়ার গান
শিল্পীঃ সনৎ সিংহ
তালঃ দাদরা
কথাঃ রঞ্জিত রায়
সুরঃ প্রবীর মজুমদার

এক এক্কে এক, দুই এক্কে দুই
নামতা পড়ে ছেলেরা সব পাঠশালার ওই ঘরে
নন্দীবাড়ির আটচালাতে কুমোর ঠাকুর গড়ে
মন বসে কি আর ! আহা হা,
চণ্ডীতলায় বাদ্দি বাজে ঢাক গুড়্‌ গুড়্‌
জা গি না, তাক্‌ তা ধিনা, তাক্‌ তা ধিনা
তাক্‌ কুড়্‌ কুড়্‌, কুড়ুর কুড়ুর তাক্‌।।

দুই এক্কে দুই, দুই দু’গুণে চার
তিন দু’গুণে ছয়, চার দু’গুণে আট।
ভাল্‌ লাগেনা পুজোর সময় পাঠশালার এই পাঠ,
গুরুমশাই বসে আছেন চশমাটি আঁটসাঁট।
কে জানে, এতক্ষণে হয়তো মায়ের মুখ হলো রঙ করা,
আন্‌মনা ওই ছেলেরা সব থাক না এবার পড়া
মন বসে না আর! আহা হা,
চণ্ডীতলায় ঢাকের আওয়াজ মিষ্টি-মধুর
জা গি না, তাক্‌ তা ধিনা, তাক্‌ তা ধিনা
তাক্‌ কুড়্‌ কুড়্‌, কুড়ুর কুড়ুর তাক্‌।।

তিন এক্কে তিন, তিন দু’গুণে ছয়
চার দু’গুণে আট, পাঁচ দু’গুণে দশ।
ভুল হয়ে যায় পুঁথির পড়ায়, মন মানে না বশ্‌,
পড়ার কথা ভাবলে চোখে জল পড়ে টস্‌ টস্‌।
কে জানে এবার বোধহয় সিংহরাজের কেশর দিন জুড়ে
অসুর বোধহয় বেরিয়ে গেছে মোষের পেটটি ফুঁড়ে
মন মানে না আর! আহা হা,
কতক্ষণে যাবে যে সব দেখবে ঠাকুর
জা গি না, তাক্‌ তা ধিনা, তাক্‌ তা ধিনা
তাক্‌ কুড়্‌ কুড়্‌, কুড়ুর কুড়ুর তাক্‌।।

আধুনিক গান
কথাঃ বিশ্বনাথ দাশ // সুরঃ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

এখনও সারেঙ্গিটা বাজছে
এখনও চেনা চেনা আতরের গন্ধ
একি রোমাঞ্চ, শুধু রোমাঞ্চ
নাকি আগামী দিনের কোনো
ঝড়ের আভাস বয়ে আনছে ।।

আমার নয়নে নয়ন রেখে
নয়নের কথা দিয়ে গিয়েছ ডেকে
আশ্বাসে বিশ্বাস হয় না আমার
ভাবি দারুণ সর্বনাশ হয়তোবা
আমাকেই কাছে ডাকছে।।

তোমার দু’হাত ধরে এগিয়ে গিয়ে
ভয় হয় শেষে যদি দাও ফিরিয়ে
নিঃশ্বাসে সংশয় শুধুই আমার
ভাবি জীবন মরণে কেঊ অকারণ
তরঙ্গ তুলে যাচ্ছে।।


এখনও সারেঙ্গিটা বাজছে
এখনও চেনা চেনা আতরের গন্ধ
একি রোমাঞ্চ, শুধু রোমাঞ্চ
নাকি আগামী দিনের কোনো
ঝড়ের আভাস বয়ে আনছে ।।

আমার নয়নে নয়ন রেখে
নয়নের কথা দিয়ে গিয়েছ ডেকে
আশ্বাসে বিশ্বাস হয় না আমার
ভাবি দারুণ সর্বনাশ হয়তোবা
আমাকেই কাছে ডাকছে।।

তোমার দু’হাত ধরে এগিয়ে গিয়ে
ভয় হয় শেষে যদি দাও ফিরিয়ে
নিঃশ্বাসে সংশয় শুধুই আমার
ভাবি জীবন মরণে কেঊ অকারণ
তরঙ্গ তুলে যাচ্ছে।।

অতুলপ্রসাদী/ঝাঁপতাল

এসো গো একা ঘরে একার সাথী।
সজল নয়নে বলো রবো কত রাতি।
সুনীল আকাশে চন্দ্র বিকাশে, তামস নাশে,
এ আঁধারে হাসিবে কবে তব মুখ ভাতি।
তোমারে গোপন ব্যথা জানাব গোপনে,
তোমারে কুসুমমালা পরাব যতনে।
তব সঙ্গ মাগি আছি আমি জাগি, সর্ব তেয়াগী
তব চরণ লাগি আছি কান পাতি।।

ছায়াছবিঃ দাদার কীর্তি
কথাঃ পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়/সুরঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
তালঃ দাদরা

এসো প্রাণ ভরণ দৈন্য হরণ হে
বিশ্বভুব পরম শরণ হে।।
জ্যোতিপূর্ণ কর হে গগন সুধাগন্ধে ভর হে পবন
গড় চিত্ত ভবন শান্তি সদন দুঃখ বিঘ্ন তরণ হে।।
তব কৃপা করুণার কণিকা করো হে দান
অন্তর হোক অক্ষয় সুখে চির সম্পদবান
প্রেম সিন্ধু হৃদয়ানন্দে চলুক বহিয়া ছন্দে ছন্দে
হোক জীবন ধন্য এসো অনন্য বাড়াও শান্ত চরণ হে।।

নজরুলগীতি // আধুনিক অঙ্গ // তালঃ কাহারবা

এসো প্রিয় মন রাঙায়ে
ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙায়ে
মম মাধবী বন দুলায়ে।।
শোন ‘পিউ পিউ’ ডাকে পাপিয়া
মোরে সেই সুরে ডাকে পিয়া
তব আদর পরশ বুলায়ে।।
যদি আন্‌ কাজে ভুলে রহি
চলে যেওনা হে মোর বিরহী
দিও প্রিয়, কাজ ভুলায়ে।।

নজরুলগীত/কাহারবা

গোঠের রাখাল বলে দে রে, কোথায় বৃন্দাবন
যেথা রাখাল রাজা গোপাল আমার খেলে অনুক্ষণ।
যেথা দিনে রাতে মিলন রাসে, চাঁদ হাসে রে চাঁদের পাশে
যার পথের ধূলায় ছড়িয়ে আছে শ্রীহরি-চন্দন।
যেথা কৃষ্ণনামের ঢেউ ওঠে রে সুনীল যমুনায়
যার তমাল বনে আজো কানুর
নূপুর শোনা যায় গো, নূপুর শোনা যায় ।।
আজো যাহার কদম ডালে বেণু বাজে সাঁঝ-সকালে
নিত্য লীলা করে আমার মদন-মোহন।।

জাগো যোগমায়া জাগো মৃণ্ময়ী চিন্ময়ী রূপে জাগো,
তব কণিষ্ঠা কন্যা ধরণী কাঁদে আর ডাকে মা গো।
জাগো যোগমায়া জাগো মৃণ্ময়ী মা ।।
বরষ বরষ বৃথা কেঁদে যাই, বৃথাই মা তোর আগমনী গাই।
সেই কবে মা গো আসিলি ত্রেতায় আর তো আসিলি না গো।
জাগো যোগমায়া জাগো মৃণ্ময়ী মা।।
কোটি নয়নের নীলপদ্ম মা ছিঁড়িয়া দিলাম চরণে তোর,
জাগিলিনা তুই এলিনা ধরায় মা কবে হয় হেন কঠোর।
দশভুজে দশ গ্রহরণ ধরি আয় মা দশ দিক আলো করি।
দশ হাতে আন্‌ কল্যাণ ভরি নিশীথ শেষে ঊষা গো।।

রাগ প্রধান গান/দাদরা
কথাঃ সুনীলবরণ/সুরঃ সুকুমার মিত্র।

যমুনা কি বলতে পারে
কত বার কেঁদেছে রাধা ?
আন্‌মনে চলতে গিয়ে কোন্‌ পথে পেয়েছে বাধা ?
অঙ্গে সোনা ছিল যত কলঙ্কে দ্বিগুণ তত
ও কালি চন্দন হতো অবিরত।
কালিন্দীর ওই কালো জলে ভেসে গেল নীরব কাঁদা।
ধন্য প্রেমে জরজর আনন্দ অধিক আরো
পিরিতি সুন্দরতর মনোহর
গুণধর রূপ লাগি দিবানিশি হয়েছে সাধা।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভজন/কাহারবা

যে রাম সেই কৃষ্ণ, যে কৃষ্ণ সেই রাম
মধু রামকৃষ্ণ নাম, যপো রামকৃষ্ণ নাম।।
নরদেহে যে নারায়ণ, সে ভগবান পতিতপাবন।
যাঁর পায়ের ধূলায় মহাতীর্থ হলো দক্ষিণেশ্বর ধাম।।
সে যে অমৃতময় পরমপুরুষ যুগের অবতার
সেই শেখালো প্রেমের মন্ত্র সর্ব-ধর্মসার।।
ভক্তপ্রাণে পদ্মাসনে বসাও তাঁরে সযতনে
সে যে সুখের সাথী, ব্যথার ব্যথী সেই তো প্রাণারাম।।

আধুনিক গান
কথাঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার// সুরঃ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়//তালঃ কাহারবা

জোৎস্না ভেজা এই রাত
নয় থাকলে আরো কিছুক্ষণ
নয় রাখলে হাতে দুটি হাত
নয় ডাকলে আরো কিছু কাছে
দেখো জোৎস্না ভেজা এই রাত।।
তোমাকেই দু’চোখ ভ’রে দেখি
কাজল মুছে গেছে একি!
এখনই বোলোনা চলে যাই
শুধু একটু ভাবতে দাও তুমি যে আপন।।

প্রদীপ পাহারা দেয় যেন
দ্বারে হীরা মন
যেন পালিয়ে না যায় আজ
মনের প্রাসাদ ছেড়ে মন।।
মনে হয় তোমাকে নিয়ে
থাকি সেই প্রাসাদে গিয়ে
তুমি যে আমারই রাজকন্যা
সেটুকু ভেবে হোক বাসর যাপন।।

নজরুলগীতি
মিশ্র আশাবরী/দাদরা

কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন
রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব যা’র হাতে মরণ বাঁচন।।
কালো মেয়ের আঁধার কোলে শিশু রবি শশী দোলে;
(মায়ের)একটুখানি রূপের ঝলক স্নিগ্ধ বিরাট নীল গগন।।
পাগ্‌লী মেয়ে এলোকেশী নিশীথিনীর দুলিয়ে কেশ,
নেচে বেড়ায় দিনের চিতায় লীলার যে তার নাইকো শেষ।
সিন্ধুতে মা’র বিন্দু খানিক ঠিক্‌রে পড়ে রূপের মানিক;
বিশ্বে মায়ের রূপ ধরেনা, মা আমার তাই দিগ্‌বসন।।

রজনীকান্তের গান/দাদরা

কেন বঞ্চিত হব চরণে?
আমি কত আশা ক’রে ব’সে আছি,
পাব জীবনে, না হয় মরণে।
আহা তাই যদি নাহি হবে গো,
পাতকি তারণ-তরীতে তাপিত
আতুরে তুলে না লবে গো!
হ’য়ে পথের ধুলায় অন্ধ,
এসে দেখিব কি খেয়া বন্ধ?
তবে পারে ব’সে ‘পার কর’ ব’লে পাপী
কেন ডাকি দীন শরণে।

আমি শুনেছি হে তৃষা হারী!
তুমি এনে দাও তারে প্রেম অমৃত,
তৃষিত যে চাহে বারি;
তুমি আপনা হইতে হও আপনার,
যার কেহ নাই তুমি আছ তার
সব মিছে কথা ভাবিতে যে-ব্যথা
বড় বাজে প্রভু মরমে ।

ছায়াছবিঃ শেষ পর্য্যন্ত
কথাঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
সুরঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
তালঃ কাহার্‌বা

কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো
কে তুমি কে তুমি আমায় ডাকো।
মনে হয় তবু বারে বারে
এই বুঝি এলে মোর দ্বারে
সে মধুর স্বপ্ন ভেঙো নাকো।
ভাবে মাধবী সুরভী তার বিলায়ে
যাবে মধুপের সুরে সুরে মিলায়ে।
তোমারি খেয়ালে ক্ষনে ক্ষনে
কত কথা জাগে মোর মনে
চোখে মোর ফাগুনের ছবিটি আঁকো।

নজরুলগীতি/কাহারবা

কেন ফোটে কেন কুসুম ঝরে যায়
মুখের হাসি চোখের জলে নিভে যায়।।
নিশীথে যে কাঁদিল গলা ধরে
নিশিভোরে সে কেন যায় সরে যায়।।
আজ যাহার প্রেম করে গো রাজাধিরাজ
কাল কেন সে চির কাঙাল ক’রে যায় ।।
হায় অভিমান খেলার ছলে
ফিরে সে আসে না যায় যে চলে
মিলন-মালা মলিন ধূলায় ঢেকে যায়।।

নজরুলগীতি
ভৈরবী/ভজন/কাহারবা

খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা, নিরজনে প্রভু নিরজনে।।
শূন্যে মহা আকাশে তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে।
ভাঙিছ গড়িছ নিতি ক্ষণে ক্ষণে।।
তারকা রবি শশী খেলনা তব, হে উদাসী,
পড়িয়া আছে রাঙা পায়ের কাছে রাশি রাশি।।
নিত্য তুমি, হে উদার, সুখে দুঃখে অবিকার।
হাসিছ খেলিছ তুমি আপন মনে।।

নজরুলগীতি/কাহারবা

কোকিল সাধিলি কী বাদ
নিশি অবসান হল না মিটিতে সাধ।।
মিলনেরই মোহ কেন
ডাকিয়া ভাঙিলি হেন,
তুই রে সতিনী যেন – চন্দ্রাবলীর ফাঁদ।।
সারা নিশি অভিমানে
চাহিনি শ্যামের পানে,
জেগে দেখি অভিমানে নাহি শ্যামচাঁদ।।
কুটিলা ননদিনী কি
পাঠায়েছে তোরে পাখি,
সুখের বাসরে আসি
আনিলি বিষাদ।।

কথাঃ গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
তালঃ কাহারবা
সুরঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
ছায়াছবিঃ বাদশা
শিল্পীঃ রাণু মুখোপাধ্যায়

লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া ধরেছে যে বায়না
চাই তার লাল ফিতে চিরুনী আর আয়না।
জেদ বড়ো লাল-পেড়ে টিয়া রঙ শাড়ী চাই,
মন ভরা রাগ নিয়ে হলো মুখ ভারী তাই।
বাটা ভরা পান দেবো মান কেন যায় না।।
ছোট থেকে কোনদিন বড়ো যদি হতে চাও
ভালো ক’রে মন দিয়ে পড়াশুনা করে যাও
দুষ্টুমি করে যে কেঊ তারে চায়না।।

নজরুলগীতি/ত্রিতাল

মাগো চিন্ময়ী রূপ ধ’রে আয়।
মৃণ্ময়ী রূপ তোর পূজি শ্রীদুর্গে
তাই দুর্গতি কাটিলনা হায়।।
যে মহা-শক্তির হয়না বিসর্জন
অন্তরে বাহিরে প্রকাশ যার অনুক্ষণ
মন্দিরে দুর্গে রহে না যে বন্দী
সেই দুর্গারে দেশ চায়।।
আমদের দ্বিভুজে দশভুজা-শক্তি
দে পরব্রহ্মময়ী !
শক্তি পূজার ফল ভক্তি কি পাবো শুধু
হবনা কি বিশ্বজয়ী ?
এই পূজা-বিলাস সংহার্‌ কর্‌
যদি পুত্র শক্তি নাহি পায়।।

ছায়াছবিঃ দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন
কথাঃ শুভেন্দু দাশমুন্সি
সুরঃ বিক্রম ঘোষ
তালঃ দাদরা

মাগো তুই আসবি বলে যতই আলো জ্বেলেছিলাম,
নবমীর রাত পোহাতেই সব নিভিয়ে ফেলেছিলাম।।
কৈলাশে মা ফিরলি রে তুই সকল কথা ফেলে রেখে
মন ভরল কোথায় মাগো তোর ওই মুখ দেখে দেখে
চালচিত্রের সামনে প্রদীপ একটি মাত্র জ্বেলে রেখে
ভাবছি মা তোর রূপের আলো যুগে যুগে মন ভোলালো
মন খারাপের ঢাকের বোল্‌ও কোন্‌ খেয়ালে মন দোলালো।।
বিদায় দেবার আগে মা তোর গাল দু’খানি ছুঁই
আসছে বছর এই শরতে আবার আসিস তুই।।

শ্যামাসঙ্গীত/তালঃদাদরা
কথাঃ দ্বিজেন চৌধুরী/সুরঃ প্রচলিত

(আমার) মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠনা ফুটে মন
(ও) তার গন্ধ না থাক যা আছে সে নয় রে ভুয়ো আবরণ।।
জানি জুঁই মালতী হায় কত গন্ধ যে ছড়ায়
তবু ঘরের ফেলে পরের কাছে নিজেরে বিলায়।
(ও মন) ওরে তোর মতো যে নেইকো তাদের মায়ে-পোয়ে আলাপন।।
আমার তাইতো লাগে ভয় প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে হই বুঝিবা ক্ষয়,
ওরে যেন ভুলিস না তোর দয়াময়ী মা
তাঁর রক্তমাখা কালো রূপে ঘোচায় কালিমা।।
ও মন তাই বলি আয় ওই রাঙা পায় করি আত্ম সমর্পণ।।

নজরুলগীতি/দাদরা

ম্লান আলোকে ফুটলি কেন গোলক-চাঁপার ফুল।
ভূষণহীনা বনদেবী কার হ’বি তুই দুল।।
হার হ’বি কার কবরীতে
সন্ধ্যামণি দূর নিভৃতে,
অভিমানে ব’সে আছে ছড়িয়ে এলোচুল।।
মাটির ধরার ফুলদানিতে হবে না তোর ঠাঁই,
আদর কে আজ করবে তোরে,
বসন্ত যে নাই, ওরে বসন্ত যে নাই।।
গোলক-চাঁপা খুঁজিস কারে, কোন গোকুলের দেবতারে
সেই দেবতা নাই রে হেথা শূন্য যে গোকুল।।

নজরুলগীতি/ঝাঁপতাল

মন জপ নাম শ্রীরঘুপতি রাম নব দূর্বাদলশ্যাম নয়নাভিরাম!
সুরাসুর-কিন্নর-যোগী-মুনি-ঋষি-নর চরাচর যে নাম জপে অবিরাম॥
সজল-জলদ-নীল-নবঘন কান্তি
নয়নে করুণা, আননে প্রশান্তি।
নাম শরণে টুটে যায় শোক-তাপ-ভ্রান্তি, রূপ নেহারি মূরছিত কোটি কাম॥

নজরুলগীতি

মোরা একই বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।
মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।
এক সে আকাশ মায়ের কোলে যেন রবি-শশী দোলে,
এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ীর টান।
মোরা এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল
এক সে মায়ের বক্ষে ফলে একই ফুল ও ফল।
এক সে দেশের মাটিতে পাই, কেউ গোরে কেঊ শ্মশানে ঠাঁই,
মোরা এক ভাষাতে মা’কে ডাকি এক সুরে গাই গান।

অতুলপ্রসাদী/দাদরা

বঁধুয়া, নিদ নাহি আঁখিপাতে
আমিও একাকী, তুমিও একাকী, আজি এ বাদল-রাতে।।
ডাকিছে দাদুরী মিলন তিয়াসে, ঝিল্লি ডাকিছে উল্লাসে।
পল্লীর বধূ বিরহী বঁধুরে মধুর মিলনে সম্ভাষে
আমার যে সাধ বরষার রাত কাটাই নাথের সাথে।।
গগনে বাদল, নয়নে বাদল, জীবনে বাদল ছাইয়া,
এসো হে আমার বাদলের বঁধু চাতকিনী আছে চাহিয়া।।
কাঁদিছে রজনী তোমার লাগিয়া, সজনী তোমার জাগিয়া।
কোন্‌ অভিমানে হে নিঠুর নাথ এখনও আমারে ত্যাগিয়া
এ জীবন-ভার হয়েছে অবহ সঁপিব তোমার হাতে।।

ছায়াছবিঃ মুসলমানীর গল্প
কথা ও সুরঃ দেবজ্যোতি মিশ্র
তালঃ দাদরা

নির্মল করো মঙ্গল করো দশভুজা ত্রিনয়নী,
এইটুকু মোর প্রার্থনা ওগো তোমায় হে জননী।।
উষ্ণতা ভরা এই জীবনে তপ্ত হৃদয় খানি,
শীতল করো, শান্ত করো, ঘুচাও সকল গ্লানি।
মঙ্গলগানে মুখরিত হোক তোমার স্তবের বাণী।।
রাত্রি শেষে আসে যেমন নূতন ভোরের আলো,
তোমার কৃপায় অমলিন হোক দূর করো সব কালো।
পবিত্র হোক তোমার পরশে ধন্য মাতৃভূমি।।

ছড়ার গান।। কথা ও সুরঃ সলিল চৌধুরী

ও আয় রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে
ঢ্যাং কুড়্‌ কুড়্‌ ঢ্যাং কুড়া কুড়্‌ বাদ্যি বেজেছে
গাছে শিউলি ফুটেছে কালো ভোমরা জুটেছে
আজ পাল্লা দিয়ে আকাশে মেঘেরা ছুটেছে।।

ও মাগো মা দাওনা পরিয়ে
নতুন জামা-ফ্রক দাওনা পরিয়ে
নতুন নতুন গয়না যা দিয়েছ গড়িয়ে
আজ সবার সাথে আনন্দেতে যাইনা বেরিয়ে।।

কাঁদছো কেন আজ ময়না পাড়ার মেয়ে
নতুন জামা ফ্রক পাওনি বুঝি চেয়ে
আমার কাছে যা আছে সব তোমায় দেব দিয়ে
আজ হাসি খুশি মিথ্যে হবে তোমাকে বাদ দিয়ে।।

রজনীকান্তের গান

ওই বধির যবনিকা তুলিয়া মোরে প্রভু
দেখাও তব চির আলোক লোক।
ওপারে সবই ভালো, কেবল সুখ-আলো
এপারে সবই ব্যথা, আঁধার শোক।
মাঝে দুস্তর কঠিন অন্তর,
শ্রান্ত পথিকেরে বলিছে, সর সর
ওই তোরণ পাদদেশে পিপাসাতুর এসে
ফিরে কি যাবে লয়ে চির বিয়োগ?
ওই নিঠুর অর্গল, করুণ শুভ করে,
মুক্ত করি দেহ আতুর দীন তরে,
পিপাসা দিলে তুমি, তুমিই দিলে ক্ষুধা
তোমারি কাছে আছে শান্তি সুখ-সুধা,
পাবে, অধীর ব্যাকুলতা, তোমাতে সফলতা
হউক তব সনে অমৃত যোগ।

দ্বিজেন্দ্রগীতি/দাদরা

ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সঙ্গীত ভেসে আসে,
কে ডাকে কাতর প্রাণে, মধুর তানে আয় চলে আয়,
ওরে আয় চলে আয় আমার পাশে।।
বলে আয়রে ছুটে, আয়রে ত্বরা, হেথা নাইকো মৃত্যু, নাইকো জরা,
হেথা বাতাস গীতি-গন্ধভরা, চির স্নিগ্ধ মধুমাসে,
হেথা চির-শ্যামল বসুন্ধরা, চির-জ্যোৎস্না নীল আকাশে।।
কেন ভুতের বোঝা বহিস পিছে, ভুতের বেগার খেটে মরিস মিছে,
দেখ ওই সুধাসিন্ধু উছলিছে, পূর্ণ ইন্দু পরকাশে,
ভূতের বোঝা ফেলে ঘরের ছেলে আয় চলে আয় আমার পাশে।।
কেন কারাগৃহে আছিস বন্ধ, ওরে ওরে মূঢ়, ওরে অন্ধ,
ভবে সেই সে পরমানন্দ, যে আমারে ভালবাসে,
কেন ঘরের ছেলে পরের কাছে পড়ে আছিস পরবাসে ।।

নজরুলগীতি/ত্রিতাল

পরদেশী মেঘ যাও রে ফিরে।
বলিও আমার পরদেশী রে।।
সে দেশে যবে বাদল ঝরে, কাঁদে নাকি প্রাণ একেলা ঘরে,
বিরহ-ব্যথা নাহি কি সেথা, বাজে না বাঁশি নদীর তীরে।।
বাদল-রাতে ডাকিলে ‘পিয়া পাপিয়া, পিয়া পাপিয়া’
বেদনায় ভ’রে ওঠে নাকি রে কাহারো হিয়া।
ফোটে যবে ফুল, ওঠে যবে চাঁদ, জাগে না সেথা কি প্রাণে কোন সাধ,
দেয় না কেহ গুরু গঞ্জনা সে দেশে বুঝি কুলবতী রে।।

নজরুলগীতি/কাহার্‌বা

ফিরিয়া যদি সে আসে আমার খোঁজে ঝরা গোলাবে
আনিয়া সমাধি পাশে আমার বিদায় বাণী শোনাবে।।
বলিও তারে এখানে এসে ডাকে যেন মোর নাম ধ’রে সে,
রবাব যবে কাঁদিবে রমল সুরের কোমল রেখাবে।।
তৃষিত মরুর ধূসর গগন যেমন হেরে মেঘের স্বপন
তেমনি দারুণ তিয়াসা ল’য়ে কাটিল আমার বিফল জীবন
একটি ফোটা আঁখি-জল ঝরে যেন তার হাতের শরাবে।।

নজরুলগীতি

প্রজাপতি, প্রজাপতি, কোথায় পেলে ভাই এমন রঙীন পাখা
টুকটুকে লালনীল ঝিল্‌মিল্‌ আঁকা-বাঁকা !
তুমি টুলটুলে বনফুলে মধু খাও, মোর বন্ধু হয়ে সেই মধু দাও
ওই পাখা দাও, সোনালী রূপালী পরাগ মাখা।
মোর মন যেতে চায় না পাঠশালাতে
প্রজাপতি, তুমি নিয়ে যাও সাথে ক’রে, তোমার সাথে প্রজাপতি।
তুমি হাওয়ায় নেচে নেচে যাও,
আর তোমার মতো মোরে আনন্দ দাও,
এই জামা ভালো লাগে না, দাও জামা ওই ছবি আঁকা।।

ভৈরবী/তেওরা

প্রভাত-বীণা তব বাজে বাজে হে !
উদার-অম্বর মাঝে !
তুষার-কান্তি তব প্রশান্তি--
শুভ্র-আলোকে রাজে হে !
তব আনন্দিত গভীর-বাণী--
শোনে ত্রিভুবন যুক্ত-পানি !
মন্ত্রমুগ্ধা ভাবগঙ্গা
নিস্তরঙ্গা লাজে হে !

নজরুলগীতি/বিদেশীসুর/কাহারবা

রুম্‌ ঝুম্‌ ঝুম্‌ ঝুম্‌ রুম্‌ ঝুম্‌ ঝুম্‌
খেজুর পাতার নূপুর বাজায়ে কে যায়।
ওড়না তাহার ঘূর্ণী হাওয়ায় দোলে
কুসুম ছড়ায় পথের বালুকায় ।।

তার ভুরুর ধনুক বেঁকে ওঠে তনুর তলোয়ার
সে যেতে যেতে ছড়ায় পথে পাথরকুচির হার।
তার ডালিম ফুলের ডালি, গোলাপগালের লালি
ঈদের চাঁদও চায় ।।

আরবী ঘোড়ার সওয়ার হয়ে বাদশাজাদা বুঝি
সাহারাতে ফেরে কোন্‌ মরীচিকায় খুঁজি
কত তরুণ মুসাফির পথ হারালো হায় !
কত বনের হরিণ মরে তারি রূপ-তৃষায় ।।

ছবি: মহাতীর্থ কালীঘাট
কথা: হরেকৃষ্ণ মুখার্জী/সুর: রথীন ঘোষ
তালঃ ত্রিতাল

(মাগো) সাজাব তোমারে মাগো রাঙা কমলে
ধোয়াব চরণ দুটি নয়ন জলে।
অশিব বিনাশিনী শিব সীমন্তিনী
দক্ষসুতা সতী তুমি দাক্ষ্যায়নী
ত্রিভুবন পালিনী বিশ্ব বিমোহিনী
প্রণমি জননী তব পদ যুগলে।
এনেছি কুসুম যত সাজায়ে মনের মত
পুজিব চরণ জবা বিল্বদলে।
গিরিজা গৌরী উমা তুমি কাত্যায়নী
ভৈরবী যোগমায়া তুমি মহাযোগিনী
রাধিকা আরাধিকা কৃষ্ণ সেবাব্রতা
মঙ্গল দায়িনী অবনী তলে।

শ্যামসংগীত/ঝাঁপতাল

সকলই তোমার ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি
তোমার কর্ম তুমি করো মা, লোকে বলে করি আমি।।
পঙ্কে বদ্ধ কর করি, অঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি
কারে দাও মা ব্রহ্মপদ, কারে করো অধগামী।।
আমি যন্ত্র তুমি যন্ত্রী, আমি ঘর তুমি ঘরণী
আমি রথ, তুমি রথী যেমন চালাও তেমনি চলি।।

গজল/দাদরা

সলোনা সা সজন হ্যায় অউর ম্যায় হুঁ
জিয়া ম্যায় এক অগন হ্যায়, অউর ম্যায় হুঁ।।
তুম্‌হারে রূপ কী ছায়া মে সাজন,
বড়ি ঠান্ডি জলন্‌ হ্যায়, অউর ম্যায় হুঁ।।
চুরায়ে চৈন রাতো কো জগায়ে,
পিয়া কা য়ে চলন্‌ হ্যায়, অউর ম্যায় হুঁ।।
পিয়া কে সামনে ঘুঙ্ঘট্‌ উঠাদে,
বড়ি চঞ্চল পবন্‌ হ্যায়, অউর ম্যায় হুঁ।।
রচেগী যব মেরে হাথো মে মেহেদি,
উসি দিন কী লগন হ্যায়, অউর ম্যায় হুঁ।।

কথাঃ প্রণয় দত্ত রায়/সুরঃ কিশোর চট্টোপাধ্যায়
তালঃ কাহারবা

শারদ প্রাতে কাশের দোলায় তুমি এলে
শিশির ঝরায়ে, শিউলি ফোটায়ে তুমি এলে।।
ছন্দের দোলায় হৃদয় হরষে সুর পেলো
প্রাণের কথায় সুরের পরশে গান হলো
আগমনী তুমি প্রেমময়ী রূপ দেখালে।।
মিলনের মেলায় প্রাণের মিতালি আজ হলো
আষাঢ় খেয়ায় নয়নে স্বপন নিয়ে এলো
মুছে দিয়ে কালো ঘরে ঘরে আলো জ্বালালে।।

শিশির-জলে ধুয়ে আঁখি শরতের ভোরে
পদ্ম-পাতায় চরণখানি রাখলো কেমন ক’রে।
শেফালি আর কাশের ফুলে,
পূজার ডালার মালা দোলে,
মন ভেসে যায় মেঘের ভেলায়,
রইতে নারি ঘরে।।
চরণ ফেলে আসে যে মা, শিউলি ফুলের বুকে
সেই বারতা লয়ে ভ্রমর বেড়ায় মহা সুখে।
হিমালয়ের তুষার-সারি,
মা আসে যার নিজের বাড়ি।
দিগন্তে আজ আলোর খেলা,
দেখছি পরাণ ভ’রে।।

নজরুলগীতি/রাগঃ লাচ্ছাশাখ/তালঃ ত্রিতাল

শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল
শান্ত অচঞ্চল ধ্রুব-জ্যোতি !
অশান্ত এ চিত করো হে সমাহিত
সদা আনন্দিত রাখো মতি।।
দু:খ শোক সহি অসীম সাহসে
অটল রহি যেন সম্মানে যশে,
তোমার ধ্যানের আনন্দ-রসে
নিমগ্ন রহি হে বিশ্ব-পতি।।
মন যেন না টলে কল কোলাহলে,
হে রাজ-রাজ !
অন্তরে তুমি নাথ সতত বিরাজ,
হে রাজ-রাজ !
বহে তব ত্রিলোক ব্যাপিয়া, হে গুণী,
ওঙ্কার-সঙ্গীত-সুর-সুরধুনী !
হে মহামৌনী, যেন সদা শুনি
সে সুরে তোমার নীরব-আরতি।।

শুভ্র শঙ্খরবে সারা নিখিল ধ্বনিত
আকাশতলে অনিলে জলে দিকে দিগঞ্চলে
সকল লোকে পুরে বনে বনান্তরে
নৃত্যগীত ছন্দে নন্দিত ।
শরত প্রকৃতি উল্লাসি উৎসব গানে
চিরসুন্দর চিরসুন্দর চিতসুন্দর বন্দনরাগে ।
ত্রিলোকে যোগে শরন্ময়ী আনন্দে,
মহাশক্তিরূপা j”¥m শোভা রাগে আনন্দে
রাজে যে কল্যাণী সদা রাজে, সদা সুখদা, সদা বরদা,
সদা জয়দা ক্ষেমঙ্করী সুধা রাজে।
অসুরনাশন দশপ্রহরণভুজা রাগে।



রণিত বীণা বেণু মধু ললিত শমিত তানে
শুভ আরতি ঝঙ্কৃত ভুবনে
নবজ্যোতি রাগে জ্যোতি অলঙ্কারে
প্রাণে প্রাণে ওঠে গীতি, সুধারসঘন শান্তি
ঝনঝন জয় গানে।



সবাইকে আসন্ন শারদ উৎসবের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। # “শুভ্র শঙ্খরবে সারা নিখিল ধ্বনিত” মহিষাসুরমর্দিনীর গানগুলির অন্যতম এই গানটি ৩টি তালে নিবদ্ধ। প্রথমে ঝাঁপতাল, তারপর তেওরাতাল এবং সব শেষে দাদরা। তারপর আবার ঝাঁপতালে ফেরা। এইভাবে একাধিক তালের গানকে বলা হয় ‘তাল ফেরতা’।
প্রথমে গানের স্বরলিপি ভেঙে ভেঙে গেয়ে দেখাব, তারপর সবশেষে হারমোনিয়ামে বাজিয়ে দেখিয়ে দেব। শুরু করছি আজকের ক্লাস।

নজরুলগীতি/কাহারবা

শুকনো পাতার নূপুর পায়ে নাচিছে ঘুর্ণি বায়
জল তরঙ্গে ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে সে যায়।
দীঘির বুকে শতদল দলি, ঝরায়ে বকুল চাঁপার্‌ কলি
চঞ্চল ঝর্ণার জল ছল ছলি, মাঠের পথে সে ধায়।
বনফুল আভরণ খুলিয়া ফেলিয়া, আলুথালু এলোকেশ গগনে মেলিয়া
পাগলিনী নেচে যায় হেলিয়া দুলিয়া ধূলি-ধূসর কায়
ইরানি বালিকা যেন মরু-চারিণী, পল্লীর প্রান্তর বনমনোহারিণী
ছুটে আসে সহসা গৈরিক বরণী, বালুকার উড়্‌নি গায়।।

শ্যামা মা কি আমার কালো রে
লোকে বলে কালী কালো
আমার মন তো বলে না কালো রে
কালো রূপে দিগম্বরী !
হৃদিপদ্ম করে মোর আলো রে।।

শ্যামা কখনো শ্বেত, কখনো পীত,
কখনো নীললোহিত রে,
মায়ের সে ভাব কেমন বুঝিতে না পারি
ভাবিতে জনম গেল রে।।

শ্যামা কখনো পুরুষ, কখনো প্রকৃতি,
কখনো শূণ্যাকার হে !
মায়ের সে ভাব ভাবিয়া কমলাকান্ত
সহজে পাগল হলো রে।।

কথাঃ বাণীকুমার, সুরঃ পঙ্কজকুমার মল্লিক
রাগঃ মিশ্র বিভাস
তালঃ ত্রিতাল।

তব অচিন্ত রূপ-চরিত-মহিমা,
নব শোভা, নব ধ্যান রূপায়িত প্রতিমা,
বিকশিল জ্যোতি প্রীতি মঙ্গল বরণে।
তুমি সাধন ধন ব্রহ্ম বোধন সাধনে।
তব প্রেম-নয়ন ভাতি নিখিল তারণী
কনককান্তি ঝনিছে কান্ত বদনে।
হে মহালক্ষ্মী জননী গৌরী শুভদা,
জয় সংগীত ধ্বনিছে, ধ্বনিছে তোমারই ভুবনে।

আধুনিকগান/কথা ও সুরঃ গৌতম ঘোষাল/তালঃ দাদরা

তোমার কাছে ফাগুন চেয়েছে কৃষ্ণচূড়া।
তুমি তাই দু’হাত ভ’রে দিলে আগুন উজাড় করে,
সেকি তোমার অহংকার?
তুমি চাও বাউল বাতাস কিংবা হঠাৎ সর্বনাশা আগুন খেলা,
শান্ত আকাশে তখন সাঁঝের বেলা।
এমনি তোমার ইচ্ছে-চলা যায় ভেসে যায় পাগলপারা।।
যদি ধরো জেতার বাজি, আমি হেরেই যেতে রাজি।
কখনও কি শূন্য মন-অরণ্য কোণে হওনি নিজের মুখোমুখি?
ভালোবাসার আঁধার তোমায় পোড়ায়নি কি?
সে আঁধারে তুমি কি আমার অহঙ্কারের পাওনি সাড়া?

নজরুলগীতি/আধুনিক/দাদরা

তোমারি আঁখির মত আকাশের দুটি তারা
চেয়ে থাকে মোর পানে নিশীথে তন্দ্রাহারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?
ক্ষীণ্‌ আঁখি দীপ জ্বালি বাতায়নে জাগি একা
অসীম অন্ধকারে খুঁজি তব পথরেখা
সহসা দখিন বায়ে চাঁপাবনে জাগে সাড়া।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?
তব স্মৃতি যদি ভুলি ক্ষণ তরে আন্‌ কাজে
কে যেন কাঁদিয়া ওঠে আমার বুকের মাঝে।
বৈশাখী ঝড়ে রাতে চমকিয়া উঠি জেগে
বুঝি অশান্ত মম আসিলে ঝড়ের বেগে
ঝড় চলে যায় কেঁদে ঢালিয়া শ্রাবণ ধারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?

রজনীকান্তের গান/তেওরা

তোমারি দেওয়া প্রাণে তোমারি দেওয়া দুখ,
তোমারি দেওয়া বুকে তোমারি অনুভব।
তোমারি দু’নয়নে তোমারি শোকবারি;
তোমারি ব্যাকুলতা তোমারি ‘হা হা’ রব।।
তোমারি দেওয়া নিধি, তোমারি কেড়ে নেওয়া,
তোমারি শঙ্কিত আকুল পথ চাওয়া।
তোমারি নিরজনে ভাবনা আন্‌মনে;
তোমারি সান্ত্বনা শীতল সৌরভ।।
আমিও তোমারি গো তোমারি সকলি তো
জানি এ জানেনা এ মোহ হত চিত।
আমারি ব’লে কেন ভ্রান্তি হল হেন?
ভাঙো এ অহমিকা মিথ্যা গৌরব।।

শ্যামাসংগীত/তেওরা
কথা ও সুরঃ শ্রী অভয়

তুই নাকি মা দয়াময়ী শুনেছি ওই লোকের মুখে
দানে নাকি সারা বিশ্ব ভরে আছে দিকে দিকে।।
রূপে রসে গন্ধে গানে সকল ভাবে সকল খানে,
তুই নাকি মা আছিস নিজে ডাকিস মোরে স্নেহের ডাকে।।
এতই যদি দয়াময়ী, এতই যদি স্নেহময়ী,
রাখলি কেন কাঙাল করে অধম করে এ বালকে।।
দুঃখ যদি তোর ছিল জানা সুখ দিতে কে করল মানা
শক্তি বুঝি ফতুর হল ভক্তি দিতে অধমটাকে।।

রজনীকান্তের গান /তেওরা

তুমি আমার অন্তস্থলের খবর জানো, ভাবতে প্রভু আমি লাজে মরি !
আমি দশের চোখে ধুলো দিয়ে কী না ভাবি আর কী না করি !
সে সব কথা বলি যদি আমায় ঘৃণা করে লোকে,
বসতে দেয় না এক বিছানায় বলে ত্যাগ করিলাম তোকে ।
তাই পাপ করে হাত ধুয়ে ফেলে আমি সাধুর পোষাক পরি
আর, সবাই বলে লোকটা ভালো ওর মুখে সদাই হরি।।
যেমন পাপের বোঝা এনে প্রাণের আঁধার কোণে রাখি,
অমনি চমকে উঠে দেখি, পাশে জ্বলছে তোমার আঁখি।
তখন লাজে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমি চরণতলে পড়ি,
বলি, বমাল ধরা পড়ে গেছি, এখন যা করো হে হরি।।

নজরুলগীতি/দাদরা

তুমি আমার সকালবেলার সুর,
হৃদয় অলস উদাস করা অশ্রুভারাতুর।।
ভোরের তারার মতো তোমার সজল চাওয়া
ভালোবাসার চেয়ে সে যে কান্না পাওয়া
রাত্রি শেষের চাঁদ তুমি গো বিদায় বিধুর।।
তুমি আমার ভোরের ঝরা ফুল।
শিশির নাওয়া শুভ্র শুচি পূজারিণীর তুল।
অরুণ তুমি তরুণ তুমি, করুণ তারও চেয়ে
হাসির দেশে তুমি যেন বিষাদ লোকের মেয়ে
তুমি ইন্দ্র সভায় মৌন বীণা, নীরব নূপুর।।

রজনীকান্তের গান/তেওরা

তুমি, অন্তহীন, বিরাট, এ নিখিল-ব্যাপী-অচ্যুত-অক্ষর !
আমি, ধূলি-কণিকা, ক্ষুদ্র, দীন, নগণ্য, তুচ্ছ বিনশ্বর।
তুমি, নিত্য-মঙ্গল জ্যোতিঃ নির্মল, শান্ত, সুমধুর, উজ্জ্বল।
আমি, অন্ধ তমসাচ্ছন্ন, নিষ্প্রভ, পাপ-পবন-বিচঞ্চল।
তুমি, পরম সুন্দর, বিশ্বভূষণ, পূণ্য-বিভব-অলঙ্কৃত !
আমি, অধম, কুৎসিত, দুঃখপীড়িত, নিত্য-পাপ-কলঙ্কিত।
তুমি, মধুর-বরুণা-সান্দ্র-লহরী, তৃষ্ণাতুর-চির-পোষণ !
আমি, শুষ্ক, নীরস, কঠিন, নির্মম, জীব-শোণিত-শোষণ।
আমি, গর্ব করি, তবু, পুত্র তব, প্রভু, ভ্রমি সুমঙ্গল পদতলে;
তুমি, এক-গৌরব-গর্ব বঞ্চিত না করো প্রভু, দুর্বলে।

অতুলপ্রসাদ সেনের গান/দাদরা

তুমি গাও তুমি গাও গো, গাহো মম জীবনে বসি,
বেদনে বাঁধা জীবন-বীণা ঝঙ্কারি বাজাও।।
তোমার পানে চাহিয়া চলিব তরী বাহিয়া
অভয় গান গাহি ভয় ভাবনা ভুলাও।।
দগ্ধ যবে চিত্ত হবে, এ মরু সংসারে,
স্নিগ্ধ করো মধুর সুরধারে।
তোমার যে সুরে-ছন্দে, পাখিরা গাহে আনন্দে
শিষ্য করি আমারে সে সঙ্গীত শিখাও।।